হজযাত্রী পরিবহনে সমস্যা কাটেনি

 হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাত্রীদের বহির্গমন টার্মিনাল থেকে বের করে আনা হয়। তাঁরা অবস্থান নেন টার্মিনালের সামনে। পোহাতে হয় দুর্ভোগ l ছবি: প্রথম আলোসৌদি আরবে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে সৃষ্ট সংকট গতকাল শুক্রবারও কাটেনি। যাত্রীসংকটের কারণে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি হজ ফ্লাইট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীসংকটের কারণে গত ১৪ দিনে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের ২৬টি হজ ফ্লাইট বাতিল বা পিছিয়ে দেওয়া হলো।
এর জন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে, এজেন্সিগুলোর গাফিলতির জন্য এমন সংকট তৈরি হয়েছে। সূত্র বলেছে, সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া না করায় হজযাত্রীরা ভিসা পাচ্ছেন না। আবার ভিসা না হওয়ায় তাঁরা টিকিট করতে পারছেন না। ফলে এজেন্সিগুলো আগে আসন বুকিং দিলেও পরে নিশ্চিত না করায় হজযাত্রী সংকটে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে বা পিছিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বিমান বাংলাদেশের বেলা ১টা ২৫ মিনিটের যে হজ ফ্লাইট (বিজি-৭০৫৭) যেতে পারেনি, তা পিছিয়ে ১৩ আগস্ট ভোর ছয়টায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গতকাল সৌদি এয়ারলাইনসের ছয়টি ও বিমানের পাঁচটি হজ ফ্লাইটে ৪ হাজার ১০১ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন।
বিমান কর্তৃপক্ষ বলেছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-২-এর তিনতলায় আগুন লাগার কারণে গতকাল হজ ফ্লাইটসহ ছয়টি ফ্লাইট ছাড়তে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্ব হয়েছে।
হজ অফিস বলেছে, ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৪ হাজার ৮৭০ জনের ভিসা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ হাজার ৪১৩ জন সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট নিয়ে বিমানের টিকিটের অপেক্ষায় আছেন ৩২ হাজার ৮৩১ জন।
গত ২৪ জুলাই থেকে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। শেষ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। বাকি ১৮ দিনে ৭১ হাজার ৭৮৫ হজযাত্রী পরিবহন করতে চাপ তৈরি হবে বলে মনে করছে হজ অফিস।
হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যে ফ্লাইটগুলো রয়েছে তাতে এত হজযাত্রী পাঠাতে জটিলতা বা জটের সৃষ্টি হবে। তবে আমরা আশাবাদী।’ তিনি বলেন, যে ১৪টি অতিরিক্ত স্লট বরাদ্দ হয়েছে, তার পুরোটা ব্যবহার করা গেলে সব হজযাত্রীকেই সৌদি আরবে পাঠানো যাবে।
যে চাপ তৈরি হবে এর দায় কার, এমন প্রশ্নে সাইফুল ইসলাম বলেন, এই দায় নিরূপণে একটি নিরপেক্ষ কমিটি করা দরকার।
হজ ফ্লাইটে যাত্রীসংকটের জন্য এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৪টি এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার ফ্লাইট পেছানোর কারণ এজেন্সিগুলোর এই ফ্লাইটটির জন্য হজযাত্রী নির্দিষ্ট না করা। স্বীকার করছি, এই সংকটের জন্য এজেন্সিগুলোরই দোষ।’ এই এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নেওয়া হয়। মিটিংয়ে এজেন্সিগুলোকে বকাঝকা করা হয়। এ ছাড়া জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলও করা হয়।’
হজ ক্যাম্পে উৎকণ্ঠা
বিমানবন্দরের অদূরে আশকোনায় হজ ক্যাম্পে গতকাল সকাল থেকেই হজযাত্রীদের ও এজেন্সিগুলোর ব্যস্ততা দেখা গেছে। এবারই প্রথম পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের মো. আলমগীর। বললেন, ‘একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে বলে টেনশন হয়।’
গতকাল হজ ক্যাম্পে জুমার নামাজে সব হজযাত্রীর জন্য দোয়া করা হয়। বিমানবন্দরে আগুন লাগার খবর হজ ক্যাম্পে পৌঁছালে হজযাত্রীদের মাঝে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। বিকেলে হজযাত্রী রবিউল আলম ভীত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ফ্লাইট সন্ধ্যায়। আগুন লাগি গেছে। অখন ফ্লাইট কত দেরি হয় কে জানে।’
কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে নয়জন সকালে ক্যাম্পে এসেছেন। তাঁরা বললেন, তাঁদের বলা হয়েছিল, ১২ আগস্ট ফ্লাইট। কিন্তু এখনো ভিসা-টিকিট পাননি। যেতে আরও দু-তিন দিন দেরি হবে। তাঁদের মধ্যে মশিয়ার রহমান (৬৩) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এত দিন ক্যাম্পে থাকার প্রস্তুতি নিই। এখন কই থাকব, কী খাব।’

No comments

Powered by Blogger.