হামাগোর আবার কিসের ঈদ?


ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। কিন্তু বানভাসি মানুষের ভিতর উল্টো অবস্থা।
তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ নেই, খুশি নেই। তাদের কেউ কেউ বলেন, ‘হামাগোর আবার কিসের ঈদ?, হামরাতো বানবাসি মানুষ। হামাগোর এবার ঈদ নাইগা। ’ সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের ঈদে সারা দেশে আনন্দ থাকলেও নিরানন্দ ঈদ করতে হবে বানভাসি মানুষদের। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছেন অনেক বন্যার্ত মানুষ। অনেকেরই দুমুঠো ভাত জুটছে না। এদের নেই মাথা গুঁজে থাকার জায়গাটুকুও। যদিও পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এদের সমস্যা কমেনি। সরকারি-বেসরকারি একটু ত্রাণের অপেক্ষায় থাকছেন এসব মানুষ। অনেক বানভাসিই বলেন, ‘আমরাতো ঠিকমতো খেতেই পাচ্ছি না। যমুনা তীরবর্তী এলাকা চরনাদাগাড়ির ঠাণ্ডুমিয়া বলেন, ‘ভাইরে হামরাতো বানের পানিতে বাইসা গেছি। দুই বেলা খেতে পাই না, হামাগোর আবার কিসের ঈদ? পানি কমলেও হামাগোর কষ্ট তো কমে নাই। ’ জামালপুরের আটাত্তরচর এলাকার সখি বিবি বলেন, ‘হামরাতো বানবাসি মানুষ, হামাগোর কেউ খবর লয় না। ঈদ করুম কেমনে? হামাগোর এবার ঈদ নাইগা। ঘরে দুখান গরু আছিন, তাও রাইতে চুরে নিছেগা। ’ চরপ্রজাপতি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবদুল জব্বার শেখ বলেন, ‘বাবারে কত দিন ভাত খাই না। আইছে আবার ঈদ, কি যে করি। ’
শুধু ঠাণ্ডু মিয়া, সখি বিবি, জব্বারই নন, জামালপুরের বানভাসি সব হারানো হাজারো মানুষের জীবনে এমনই চিত্র। এমন চিত্র দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নওগাঁসহ যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা নদীর চর এলাকার হাজার হাজার মানুষের। এসব মানুষের যেন ঈদের কোনো আনন্দই নেই। কোনো মতে একবেলা-দুবেলা খেতে পারলেও বাঁচেন তারা। চর এলাকা আদ্রা গ্রামের ফুলজান বলেন, ‘হামরাতো বানের পানিতে বাইসা যাবানছি। কেউ এডটু দেহে না। ’ ঘোষেরপাড়া এলাকার মজিদ বলেন, ‘হামগোর থাহার জাগা নাই, খাওনের কিছু নাই। তোমহারা আইলা বাপু অনেক খুশি হইলাম। দোয়া করি তোমহারা বালা থাহ। ’ ঝাউপাড়া এলাকার ষাটোর্ধ্ব ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে চিঁড়া-মুড়ি খেয়ে আধপেটা দিন কাটছে। ’ এমনই অবস্থা বৃদ্ধা মোশেদা, ফোলকুচা গ্রামের বৃদ্ধ কবির হোসেন, চরআইরমাড়ি এলাকার ষাটোর্ধ্ব কামেত উদ্দিন, চরকামালের বার্তি এলাকার বানেছা বেগম, টুক্কারচর এলাকার মাজেদা, বিলেরপাড় গ্রামের সন্ধ্যাপুরসহ হাজার হাজার মানুষের।

No comments

Powered by Blogger.